• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

দুর্ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার বিভ্রান্তিকর তথ্য, সরে দাঁড়ালেন ইলিয়াস কাঞ্চন

  • ''
  • প্রকাশিত ২৯ জানুয়ারি ২০২৪


দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তার উদ্যোগে গঠিত ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংক্ষেপে নিসচা সংগঠনটি ২০১২ সাল থেকে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে আসছে।

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ‘সড়ক দুর্ঘটনায় বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা দেন, এ বছর থেকে আর সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তথ্য প্রকাশ করবেন না।

পরিসংখ্যান প্রকাশ না করার কারণ হিসেবে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলছেন, বিআরটিএ সেকেন্ডারি তথ্য প্রকাশ করছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য তারা নেয়নি। সরকারি সংস্থা দুই রকম তথ্য দিচ্ছে। স্বাস্থ্য ও সড়ক বিভাগের তথ্যের ভিন্নতার কারণ কী?

এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে শক্তিশালী রোডক্র্যাশ সেল করার দাবি জানান তিনি। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌ দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের ভিন্ন ভিন্ন পরিসংখ্যানে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ‘সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান’ জাতির সামনে তুলে ধরেছে তার সংগঠন। কিন্তু যখন তারা দেখলেন তাদের দেখাদেখি অনেকে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান উপস্থাপন করছে এবং নানা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, তখন এ বছর এসে তিনি ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান আর তুলে না ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত সরকারের কাছে একটি দাবি জানিয়ে এসেছি, এটি কোনো বেসরকারি সংগঠন বা কোনো ব্যক্তির পক্ষে প্রকৃত চিত্র তুলে আনা সম্ভব নয়। এর জন্য সরকারের একটি সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল এবং লোকবলের প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও প্রযুক্তিগত ডেভেলপমেন্টেরও দরকার রয়েছে- যা কোনো ব্যক্তি উদ্যোগে করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, পুলিশের রিপোর্ট আমরা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করতাম না কারণ, এই রিপোর্ট তৈরি করা হয় শুধুমাত্র মামলার ওপর ভিত্তি করে অর্থাৎ যে দুর্ঘটনার মামলা করা হত শুধুমাত্র সেই দুর্ঘটনার তথ্যই ওই রিপোর্টে থাকত। অনেকক্ষেত্রে দেখা যেত, নানা কারণে অনেক দুর্ঘটনায় মামলা হত না। যেমন, আমার স্ত্রী দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

অনেক সময় অনেকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৩০ দিনের ভেতরে মারা গেলে সেই তথ্য সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে বিবেচিত হবে। আমাদের দেশে সেটা পুলিশ উল্লেখ করে না।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩’ এ আরও বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা বা রোডক্র্যাশে মৃত্যু হয়েছে, ২১ হাজার ৩১৬ জনের। তবে পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৩৭৬ জনের। একইভাবে, ২০১৮ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে ২৪ হাজার ৯৪৪ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও পুলিশের রিপোর্টে বলা মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৬৩৫ জনের। ২০২১ সালের রিপোর্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৃত্যু হয়েছে ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০১৬ সালে প্রতি লাখে মৃত্যুহার ছিল ১৫ দশমিক তিন শতাংশ এবং ২০২১ সালে এই মৃত্যুহার ছিল প্রতি লাখে ১৯ জনের মতো।

অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, ২০২৩ সালে পাঁচ হাজার ৪৯৫ সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে নিহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ২৪ জন। পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে ওই বছর পাঁচ হাজার ৯৩ দুর্ঘটনায় চার হাজার ৪৭৫ জন নিহত। আরও দুই একটি সংগঠনের তথ্যও এরচেয়ে অনেক বেশি। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে সেটিও প্রত্যেক রিপোর্টের সঙ্গে মিলছে না। এতে করে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সরকার, পুলিশ ও বিভিন্ন রিপোর্টে ভিন্নতা রয়েছে।

আমরা মনে করি, এতে করে জাতি বিভ্রান্ত হচ্ছে। কারণ, সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের সব তথ্যকে অগ্রহণযোগ্য বলে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তোলে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া। তবে বিআরটিএ সেটা মানে না। যে যার মত তথ্য দিয়ে তার পরিসংখ্যান সঠিক বলে দাবি করছে। কেউ হাসপাতালের তথ্য দিচ্ছে না। এভাবে তো হয় না।

ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, তবে তাদের সেল চালু থাকবে সেটি নিজেদের গবেষণার জন্য।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads